পুষ্টিগুণের দিক থেকে দিন দিন সুপার ফুড হিসেবে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে বিটরুট। যদিও এটি একটি শীতকালীন ফল তবে বর্তমানে সারা বছর জুড়েই পাওয়া যায়।
ভিটামিন ও খনিজ উপাদানের ‘জিপ ফাইল’ যেন বিটরুট।
এতে পাবেন ম্যাঙ্গানিজ, ফোলেট, রিবোফ্লাবিন (ভিটামিন বি২) ও পটাশিয়াম, যা হাড় ও পেশিকে রাখে সুস্থ–সবল।
এ ছাড়া এতে আছে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, আয়রন, জিংক, আয়োডিন, ভিটামিন এ, ভিটামিন বি৬, ভিটামিন সি। ফাইবার বা আঁশ ও অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট তো আছেই।
এত কিছুর কারণেই বিটরুটকে বলা হয় ‘সুপারফুড’।
মোটকথা বিটরুট খেলে অনেক উপকার। এর মধ্যে ছয়টি বিশেষ উপকারিতার কথা জেনে রাখুন।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে
- বিটরুটে পাবেন নাইট্রেট।
- এই নাইট্রেট আমাদের দেহে ঢুকে পরিণত হয় নাইট্রিক অক্সাইডে।
- জানেন নিশ্চয়ই, রক্তচাপ ঠিক রাখতে এর ভূমিকা দারুণ।
- নাইট্রিক অক্সাইডের প্রভাবে আমাদের রক্তনালি ঠিকঠাক থাকে।
- ফলে সিস্টোলিক ও ডায়াস্টোলিক দুই ধরনের রক্তচাপ থাকে নিয়ন্ত্রণে।
- বিটরুট শরীরের রক্তপ্রবাহ আরও ভালো করে। ফলে আমাদের হৃৎপিণ্ড হয় শক্তিশালী এবং হৃদ্রোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি যায় কমে।
ওজন কমায়
- ১০০ গ্রাম সেদ্ধ বিটে পাবেন ৪৪ ক্যালরি, ১ দশমিক ৭ গ্রাম প্রোটিন, ০ দশমিক ২ গ্রাম ফ্যাট ও ২ গ্রাম ফাইবার।
- সেদ্ধ বিটরুট খেলে পাবেন প্রচুর পুষ্টি, কিন্তু এতে ক্যালরি থাকবে কম। অর্থাৎ পুষ্টি ঠিকঠাকমতো পাবেন আর ওজনও বাড়বে না।
শক্তি ও কর্মক্ষমতা বাড়ায়
- যাঁরা অ্যাথলেট বা নিয়মিত খেলাধুলা ও ব্যায়াম করেন, তাঁরা বিটরুটের জুস খেতে পারেন নিয়মিত। অ্যাথলেটদের প্রচুর শক্তির দরকার।
- বিটে থাকা নাইট্রেট শরীরের কোষে শক্তি উৎপাদক মাইটোকন্ড্রিয়ার কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। আর এতে শারীরিক কর্মক্ষমতাও বাড়ে।
- গবেষণায় দেখা গেছে, বিটের জুস শরীরের সহনশীলতা ও কার্ডিওরেসপিরেটরি (শ্বাসপ্রশ্বাসে হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুস উভয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত) কর্মক্ষমতা বাড়ায়।
- এ ছাড়া ব্যায়ামের সময় শরীরে অক্সিজেন ব্যবহারের যে প্রক্রিয়া, তা আরও গতিশীল করে।
প্রদাহ কমায়
- বেশির ভাগ রোগবালাইয়ের মূল কারণ প্রদাহ।
- শরীরের রোজকার নানা ছোটখাটো সমস্যা সেরে না উঠলে মারাত্মক প্রদাহের রূপ ধারণ করে।
- আর বিটরুট অ্যান্টি–ইনফ্ল্যামেটরি বা প্রদাহরোধী গুণে ভরপুর।
- বিটের দারুণ গাঢ় রঙের নেপথ্যে আছে ‘বিটালেইন’ নামের রঞ্জক উপাদানটি। নাইট্রোজেনসমৃদ্ধ বিটালেইনে থাকে প্রদাহরোধী উপাদান।
- ফলে প্রদাহ থেকে দূর থাকতে চাইলে বিটরুট খান।
অন্ত্র সুস্থ ও সবল রাখে
- ভালো হজম ও সুস্থ লিভারের জন্য দরকার ফাইবার বা আঁশ। যা বিটরুটে পাবেন প্রচুর পরিমাণে।
- বিটরুট শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ ধুয়েমুছে সাফ করে দেয়। যার ফলে আপনি থাকবেন নীরোগ।
- আমাদের শরীরে সুগার বা শর্করার মাত্রা কমবেশি হলে কী সমস্যা হতে পারে, তা তো সবার জানা আছে।
- বিটরুটের রস রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য যা জরুরি দরকার।
- রোজকার জীবনে প্রচুর পরিশ্রম করতে হয় আমাদের, তাই প্রচুর শক্তিও দরকার।
- বিটরুট খেলে শরীরে সারা দিন শক্তি স্থিতিশীল থাকে।
মস্তিষ্ক সুস্থ রাখে
- বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের মস্তিষ্ক দুর্বল হতে থাকে।
- বিটরুট মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ বাড়ায়। ফলে বেড়ে যায় স্মৃতিশক্তি। অর্থাৎ বিটরুট মস্তিষ্ক সুস্থ রাখতেও দারুণ কার্যকর।
আরও পাড়ুন
- বাসার ছাদে বা টবে বিটরুট চাষ করে ভেজাল মুক্ত বিটরুট খান। জেনেনিন বিটরুট চাষ পদ্ধতি।
- উচ্চফলনশীল বিটরুট বীজ (হাইব্রিড) কিনুন
বিটরুট কখন খাবেন না
- ডায়াবেটিস থাকলে বিট না খাওয়াই ভালো। বিটের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়িয়ে দেয়। তাই বিট খাওয়ার দরকার হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খেতে পারবেন ডায়াবেটিস রোগীরা।
- গলব্লাডার, কিডনিতে পাথর জমার সমস্যা থাকলে বিট খাওয়া চলবে না। কারণ বিটের অক্সালেট উপাদান এই শারীরিক সমস্যাকে বাড়িয়ে তোলে।
- রক্তচাপ কম হলে বিটরুট এড়িয়ে চলতে হবে। কারণ বিট খেলে রক্তচাপ আরও কমে যায়।
- অতিরিক্ত পরিমাণে বিট না খাওয়াই ভালো। এতে করে ত্বকে চুলকানি, অ্যালার্জি দেখা দিতে পারে।
সূত্র: দ্য হেলদি