ভারতীয় ভিসা পেতে জটিলতা এবং রাজনৈতিক সম্পর্কের টানাপোড়েনের কারণে চিকিৎসা ভ্রমণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশিদের নতুন গন্তব্য হয়ে উঠছে মালয়েশিয়া। দেশটির উন্নতমানের স্বাস্থ্যসেবা, সাশ্রয়ী খরচ, সহজ ভিসা প্রক্রিয়া এবং হালাল-বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ এ পরিবর্তনে ভূমিকা রেখেছে।
ভারত দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের প্রধান মেডিকেল ট্যুরিজম গন্তব্য হলেও সাম্প্রতিক ভারতবিরোধী মনোভাব ও সীমান্ত উত্তেজনার প্রভাবের কারণে বাংলাদেশি রোগীরা মালয়েশিয়াকে বেছে নিচ্ছেন।
মালয়েশিয়ার মেডিকেল সেক্টর উন্নত প্রযুক্তি ও রোগী-সেবার মান নিশ্চিত করে, যা দেশটির অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। বিশ্লেষকদের মতে, আঞ্চলিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি দক্ষিণ এশিয়ার মেডিকেল ট্যুরিজম খাত পুনর্গঠনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
ট্রাভেল এন্ড ট্যুর ওয়ার্ল্ডের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে ভারতে চিকিৎসা নিতে যাওয়া পর্যটকদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। পাশাপাশি বাংলাদেশিদের পছন্দের তালিকায় মালয়েশিয়া অগ্রাধিকার পাচ্ছে। এই পরিবর্তনটি যেমন আন্তর্জাতিক সম্পর্কের প্রভাবকে স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত করে, ঠিক তেমনই ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তকেও প্রভাবিত করছে।
ভৌগোলিকভাবে নিকট, সাশ্রয়ী মূল্যের চিকিৎসা সেবা এবং উন্নত প্রযুক্তির কারণে দীর্ঘদিন ধরেই ভারত ছিল বাংলাদেশের মেডিকেল ট্যুরিস্টদের জন্য প্রধান গন্তব্য। তবে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং বেড়ে ওঠা ভারত বিদ্বেষী মনোভাবের কারণে বাংলাদেশি নাগরিকেরা তাদের চিকিৎসা ভ্রমণের গন্তব্য পরিবর্তন করতে শুরু করেছেন।
উচ্চমানের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার জন্য বিশ্বব্যাপী পরিচিত মালয়েশিয়া। দেশটির মেডিকেল প্রতিষ্ঠানগুলো আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এবং মাল্টি-লিঙ্গুয়াল চিকিৎসকেরা এখানে সেবা প্রদান করছেন। সাশ্রয়ী মূল্যে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে ভারতের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নিজেদের বেশ শক্তপোক্তভাবেই প্রতিষ্ঠিত করছে মালয়েশিয়া।
মালয়েশিয়ার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীরা প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশি রোগীদের জন্য বিশেষ সেবার ব্যবস্থা করেছে। যার মধ্যে রয়েছে হালাল-বন্ধুত্বপূর্ণ থাকার ব্যবস্থা এবং সাংস্কৃতিকভাবে সংবেদনশীল যত্ন। এছাড়াও সহজ ভিসা প্রক্রিয়া, শক্তিশালী যাতায়াত ব্যবস্থা এবং সরকারের উদ্যোগগুলোর মাধ্যমে মালয়েশিয়াকে একটি মেডিকেল টুরিজম কেন্দ্র হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে, যা বাংলাদেশি পর্যটকদের জন্য আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে। রোগীর সেবা-যত্ন এবং উন্নত প্রযুক্তি এই মালয়েশিয়ার অবস্থানকে বিশ্বব্যাপী মেডিকেল টুরিজম বাজারে আরও শক্তিশালী করেছে।
বাংলাদেশি চিকিৎসা পর্যটকদের আগমনে মালয়েশিয়ার অর্থনীতি উপকৃত হচ্ছে। মেডিকেল টুরিজম থেকে রাজস্ব বৃদ্ধি পেয়েছে, যা দেশের জিডিপিতে বড় অবদান রাখছে। স্বাস্থ্যসেবা খাতের বাইরে অন্যান্য খাতগুলো যেমন হসপিটালিটি, পরিবহন, এবং খুচরা ব্যবসাতেও লাভবান হচ্ছে। যেহেতু দুই দেশের সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় পছন্দ সংগতিপূর্ণ, সেহেতু মালয়েশিয়ার হালাল টুরিজমের ওপর বিশেষ গুরুত্ব বাংলাদেশি পর্যটকদের আকর্ষণ আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
যদিও মালয়েশিয়ার মেডিকেল টুরিজম খাত প্রসারিত হচ্ছে, তবে এই পরিবর্তন ভারতের জন্য চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে। ভারতের মেডিকেল টুরিজম খাতে বাংলাদেশি পর্যটকদের আবারও আকৃষ্ট করতে হলে রাজনৈতিক চেতনা, চিকিৎসা সেবা এবং চিকিৎসা মূল্যের বিষয়গুলো সমাধান করতে হবে। অন্যদিকে, মালয়েশিয়ার স্বাস্থ্যসেবা খাতের জন্য এটি একটি সুযোগ।
যেহেতু ভারতবিরোধী মনোভাব বাংলাদেশি মেডিকেল পর্যটকদের প্রভাবিত করছে, তাই মালয়েশিয়া এই জায়গাটি নিতে সক্ষম হয়েছে। তবে এই গতি ধরে রাখতে হলে দেশের স্বাস্থ্যসেবা অবকাঠামো, বিপণন এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারত্বে কৌশলগত বিনিয়োগ প্রয়োজন। তদুপরি, বাংলাদেশি রোগীদের কাছে মালয়েশিয়ার বিশ্বাসযোগ্যতা আরও শক্তিশালী করতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নও গুরুত্বপূর্ণ।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই পরিবর্তনটি দক্ষিণ এশিয়ার মেডিকেল টুরিজম খাতকে নতুনভাবে গড়ে তুলছে। যার বড় সুবিধাভোগী হিসেবে উঠে এসেছে মালয়েশিয়া। এই পরিবর্তনটি প্রমাণ করে যে, আঞ্চলিক রাজনৈতিক এবং সামাজিক পরিস্থিতি কীভাবে বৈশ্বিক টুরিজম খাতকে প্রভাবিত করে।
সূত্র- আজকের পত্রিকা