বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে গণঅভ্যুত্থানকে সফল করতে যেসব ছাত্র—জনতা সক্রিয়ভাবে আন্দোলনের মাঠে থেকে এর পক্ষে কাজ করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে পনেরই জুলাই থেকে আটই অগাস্ট পর্যন্ত সংগঠিত গণঅভ্যুত্থান সংশ্লিষ্ট ঘটনার জন্য কোনো মামলা, গ্রেফতার বা হয়রানি করা হবে না।
এ ধরনের দায়মুক্তির প্রয়োজন হলো কেন এবং কারা দায়মুক্তি পাবে— এমন প্রশ্নের জবাবে অন্তর্বর্তী সরকারের যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ‘গণআন্দোলনে যারা অংশ নিয়েছে তাদের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য হবে যাতে তারা কোনো হয়রানির শিকার না হয়।’
এর আগে রোববার মি. ভূঁইয়া আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা যাতে না নেয়া হয়, সেজন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা আসবে বলে জানিয়েছিলেন।
নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে পুলিশ কনস্টেবল হত্যা মামলায় কয়েকজনকে আটকের প্রসঙ্গে তিনি এমন মন্তব্য করেছিলেন।
তবে হত্যা বা লুটপাটের মতো ঘটনায় তদন্ত করে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ব্যবস্থা নিতে পারবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এদিকে পুলিশ সদর দপ্তর থেকেও রোববার দেয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে এখন পর্যন্ত এক হাজার ৬৯৫টি মামলায় অক্টোবরের তের দিনেই তিন হাজার ১৯৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে এতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছাত্র—জনতা ও আপামর জনসাধারণের এক্ষেত্রে শঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশের মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের চেয়ারম্যান জেড আই খান পান্না বিবিসি বাংলাকে বলেন, ফৌজদারি অপরাধে কাউকেই দায়মুক্তি দেয়ার সুযোগ নেই। এখন যেসব চেষ্টা চলছে, সবই বেআইনি চেষ্টা।
আরেকজন মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন বলছেন, ফৌজদারি অপরাধ থাকলে সেটি নির্দেশনা দিয়ে আইনি প্রক্রিয়ার বাইরে রাখার সুযোগ থাকে না।
প্রসঙ্গত, অগাস্ট মাসে আন্দোলন চলার সময় সিরাজগঞ্জে তের জন পুলিশসহ মোট ৪৪ জন পুলিশ হত্যার পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন জায়গায় নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে।
আন্দোলনের সময়েই এর সংগঠকরা এসব ঘটনার সাথে আন্দোলনকারীদের সম্পর্ক নেই বলে জানিয়েছিলেন।
গণঅভ্যুত্থান চলার সময় শিক্ষার্থী, সাধারণ মানুষ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ সাড়ে সাতশোর বেশি মানুষ নিহত হন,আহত হয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ।
অনেক সরকারি—বেসরকারি ভবন ও যানবাহনে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। অনেক থানায় হামলার পর অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুটপাটের ঘটনাও ঘটে। সেসব অস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ অভিযানও শুরু করা হয়েছে।
দায়মুক্তি কেন? কারা পাবে?
যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, জুলাই ও অগাস্ট গণঅভ্যুত্থানের পক্ষে যারা ভূমিকা রেখেছে বা অংশ নিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা, গ্রেফতার বা হয়রানি করা হবে না বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলে দিয়েছে।
“যে কোনো বিপ্লব বা অভ্যুত্থানের পর এতে যারা অংশ নেয় তাদের হয়রানি থেকে মুক্ত রাখতে এমন পদক্ষেপ নেয়া হয়। এর ঐতিহাসিক অনেক উদাহরণ রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের পরেও সরকার এ ধরনের সিদ্ধান্ত দিয়েছিলো। কাজেই এটি নতুন কিছু নয়,” তিনি বলেন।
কিন্তু এর মাধ্যমে আন্দোলনের সময় হওয়া সব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের দায় আপনারা নিচ্ছেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনাটি শুধু যারা আন্দোলনে অংশ নিয়েছে তাদের জন্য প্রযোজ্য।
“কেউ যদি আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে থানা লুট বা আক্রমণ বা এমন কোনো অপরাধ করে সেটি তদন্ত সাপেক্ষে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ব্যবস্থা নিতে পারবে,” তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে কী বলা হয়েছে
মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার ফয়সাল হাসান স্বাক্ষরিত এ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ১৫ই জুলাই থেকে আটই অগাস্ট পর্যন্ত সংগঠিত জুলাই গণঅভ্যুত্থান সংশ্লিষ্ট ঘটনার জন্য কোনো মামলা, গ্রেফতার বা হয়রানি করা হবে না।
এতে বলা হয়েছে, “গত ৫ই অগাস্ট ছাত্র—জনতার গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের মাধ্যমে বৈষম্যমুক্ত নতুন বাংলাদেশ গড়ার পথে এক নবযাত্রা সূচিত হয়েছে। এ গণঅভ্যুত্থানকে সাফল্যমণ্ডিত করতে যেসব ছাত্র—জনতা সক্রিয়ভাবে আন্দোলনের মাঠে থেকে এর পক্ষে কাজ করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে ১৫ই জুলাই হতে ৮ই অগাস্ট পর্যন্ত সংগঠিত জুলাই গণঅভ্যুত্থান সংশ্লিষ্ট ঘটনার জন্য কোন মামলা, গ্রেফতার বা হয়রানি করা হবে না।”
মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আরো জানানো হয়েছে— “এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশনা প্রদান করা হলো। এ বিষয়ে অসত্য তথ্য প্রদান করে কোন সুবিধা অর্জনের বিরুদ্ধেও সংশ্লিষ্টদের সতর্ক করা হলো।”
ফয়সল হাসান বিবিসি বাংলার কাছে এ বিবৃতির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
তবে বিবৃতিতে জুলাই ও অগাস্টে আন্দোলন চলাকালে কিংবা পাঁচই অগাস্টের আগে ও পরে পুলিশ হত্যা, লুটপাটের মতো যেসব অপরাধমূলক ঘটনা সংঘটিত হয়েছে সেসব ঘটনার ক্ষেত্রে কী হবে সে সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।
তবে নোয়াখালীতে পুলিশ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেফতারের পর সমন্বয়ক সারজিস আলম একটি ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, গ্রেফতার হওয়া ছেলেগুলো স্থানীয় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য। তারা সমন্বয়ক নন, নিয়মিত আন্দোলনকারীও নন।
তিনি লিখেছেন, ”জনতার ভেতর থেকে কিছু সুযোগসন্ধানী ভিন্ন উদ্দেশ্যের লোক থানার অস্ত্রাগার থেকে অস্ত্র লুট করে, পুলিশের দিকে গুলি ছুড়ে এবং একজন কনস্টেবলকে পিটিয়ে হত্যা করে।… যে তিনজন ছেলেকে গ্রেপ্তার করা নিয়ে কথা হচ্ছে, তাদের গ্রেপ্তার করার মূল কারণ ছিল, তাদের মধ্যে একজন সেদিনের লুট করা অবৈধ অস্ত্রসহ টিকটকে পোস্ট দেয় ভাব নেওয়ার জন্য।”
পুলিশ কী বলছে
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্র—জনতার অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে মোট ৪৪ জন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছে বলে আগেই জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। নিহত পুলিশ সদস্যদের একটি তালিকাও প্রকাশ করেছে তারা। তাতে দেখা যায় গত বিশে জুলাই থেকে ১৪ অগাস্টের মধ্যে মোট চুয়াল্লিশ জন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন।
এর মধ্যে অন্যতম আলোচিত ঘটনা হলো সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরে থানায় আক্রমণ করে, আগুন লাগিয়ে ১৩ জন পুলিশ সদস্যকে হত্যার ঘটনা। হত্যার পর একজন পুলিশ সদস্যের গলায় ফাঁস দিয়ে গাছে ঝুলিয়ে রাখার ছবি আসে গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে। তিনজন পুলিশ সদস্যকে হত্যার পর পুকুরে ফেলে রাখা হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে অসহযোগের প্রথম দিন ৪ঠা অগাস্ট রোববার এই ঘটনা ঘটে।
সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার ফারুক হোসেন বিবিসি বাংলাকে বলেছেন এ ঘটনায় চারটি মামলা হয়েছে এবং এর তদন্ত চলছে।
“তদন্তে যাদের দোষী পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে,” বলছিলেন তিনি।
যদিও ওই ঘটনার পর প্রায় দুই মাস পার হয়ে গেলেও এখনো দায়ীদের গ্রেফতার করা যায়নি।
এছাড়া ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অনেকগুলো থানা আক্রমণ ও অস্ত্র লুটের ঘটনা ঘটে।
পুলিশ সদর দফতরের জনসংযোগ বিভাগ আগেই হামলা হয়েছে এমন প্রায় ত্রিশটি থানার তালিকা দিয়েছিলো।
গণঅভ্যুত্থানের সময় ছাত্র—জনতার ওপর হামলার ঘটনায় মামলা বা গ্রেফতারের তথ্য গণমাধ্যমে উঠে এলেও এসব ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে খুব একটা ব্যবস্থা নিতে দেখা যাচ্ছে না।
সদ্য ক্ষমতা হারানো আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা কর্মী ও সমর্থক দেশের বিভিন্ন জায়গায় হামলায় বা আক্রমণে আহত হয়ে মারা গেছেন এমন খবরও এসেছে গণমাধ্যমে। কিন্তু এসব ঘটনায় মামলা বা গ্রেফতারের তথ্য খুব বেশি জানা যায় না।
এছাড়া গত পনেরই সেপ্টেম্বর ডিএমপি সদর দপ্তরে অপরাধ বিষয়ক খবর সংগ্রহ করেন এমন সাংবাদিকদের সাথে আলোচনার সময় ঢাকায় পুলিশ হত্যা, থানায় অগ্নিসংযোগ ও অস্ত্র লুটের ঘটনায় মামলা হবে বলে জানিয়েছিলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মো. মাইনুল হাসান।
তিনি তখন বলেছিলেন, “ক্রিমিনাল ইভেন্ট কখনো তামাদি হয় না। পুলিশ হত্যা এবং থানার লুটপাটের ঘটনায়ও মামলা হবে।”
যদিও পুলিশ হত্যা, থানা আক্রমণ, হামলা বা লুটপাটের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তেমন উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।
এদিকে রোববার পুলিশ সদর দপ্তর জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন দমাতে ছাত্র—জনতাকে নির্মমভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলাকারী, হত্যার ইন্ধনদাতা ও নির্দেশ প্রদানকারীদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত এক হাজার ৬৯৫টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় অক্টোবরের ১৩ দিনেই তিন হাজার ১৯৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
“বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছাত্র—জনতা ও আপামর জনসাধারণের এক্ষেত্রে শঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। পুলিশের সেবা হবে হয়রানি মুক্ত, জনবান্ধব। কেউ যেন অযথা হয়রানির শিকার না হয়, তা বাংলাদেশ পুলিশ নিশ্চিত করবে,” বলা হয়েছে পুলিশ সদর দপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে।
হত্যা, লুটপাট থেকে দায়মুক্তি দেয়া যায়?
বাংলাদেশের আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, হত্যা, লুটপাট বা অগ্নিসংযোগের মতো গুরুতর অপরাধে প্রজ্ঞাপন বা আইন করে কাউকে দায়মুক্তি দেয়ার সুযোগ নেই। অতীতেও এরকম চেষ্টা পরবর্তীতে বাতিল হয়ে গেছে।
বাংলাদেশের মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের চেয়ারম্যান জেড আই খান পান্না বিবিসি বাংলাকে বলেন, ফৌজদারি অপরাধে কাউকেই দায়মুক্তি দেয়ার সুযোগ নেই। এখন যেসব চেষ্টা চলছে, এগুলো বেআইনি চেষ্টা।
তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেন, “কোনো অপরাধে কাউকে দায়মুক্তি দেয়ার সুযোগ নেই। এ বিষয়ে হাইকোর্টের নির্দেশনাও আছে। অপারেশন ক্লিনহার্টের ঘটনায় হাইকোর্টে যে রিট করেছিলাম, সেখানে পরিষ্কারভাবে বলে দেয়া হয়েছিল, হত্যার শিকার পরিবারগুলো প্রতিকার চেয়ে মামলা করতে পারবে। তখন বাহিনীকে দায়মুক্তি দেয়া হলেও হাইকোর্ট বলে দিয়েছিল, তারা ইমডেমনিটি পেতে পারবে না।”
২০০২ সালের ১৬ই অক্টোবর থেকে ২০০৩ সালের নয়ই জানুয়ারি পর্যন্ত যৌথ বাহিনী অপারেশন ক্লিনহার্ট পরিচালনা করে। সেই অভিযানে নিরাপত্তা বাহিনীর হেফাজতে অন্তত ৪০ জনের মৃত্যু হয়। অভিযানে অংশগ্রহণকারীদের দায়মুক্তি দিয়ে সংসদে আইন পাস করা হলেও একটি রিট আবেদনের পর ২০১৫ সালে সেই আইন অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্ট।
জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলছেন, ছাত্র—জনতার ওপর পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলি, হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে যেমন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে, তেমনি পুলিশ হত্যা, থানায় লুটপাটের মতো ঘটনায় বিচার করা জরুরি। না হলে আইনের শাসন নিশ্চিত করা যাবে না।
“এখন পর্যন্ত সরকারের তরফ থেকে পুলিশ হত্যার, থানায় হামলার ব্যাপারে পরিষ্কার কোনো বার্তা পাওয়া যাচ্ছে না। তারা কী পদক্ষেপ নেবে, তার কিছুই জানানো হচ্ছে না।’’
“কিন্তু প্রতিটি ঘটনাতেই যারা দায়ী সবাইকে বিচারের আওতায় আনা উচিত। কাউকে দায়মুক্তি দেয়া যায় না। একটা চেষ্টা চলছে, এগুলো সবই বেআইনি চেষ্টা,’’ বলছেন এই জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী।
বাংলাদেশে কোনো ঘটনায় দায়মুক্তি দেয়ার চেষ্টা এই প্রথম নয়।
বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধকালীন সব কর্মকাণ্ড, ঘটনাবলী ও যুদ্ধের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের দায়মুক্তি দিয়ে প্রথম অধ্যাদেশ জারি করা হয় ১৯৭২ সালে। পরবর্তীতে ১৯৭৪ সালে রক্ষী বাহিনীকেও তাদের কর্মকাণ্ড থেকে দায়মুক্তি দেয়া হয়েছিল।
বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যাকাণ্ডের পর দায়মুক্তি দিয়ে ১৯৭৫ সালে যে ‘ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করেছিল তৎকালীন খন্দকার মোশতাক আহমেদের সরকার, ১৯৯৬ সালে সেটি বাতিল করা হয়। পরবর্তীতে ওই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের মধ্যে ছয়জনের বিচার ও শাস্তি কার্যকর করা হয়েছিল।
মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন বলছেন, ফৌজদারি অপরাধ থাকলে সেটি নির্দেশনা দিয়ে আইনি প্রক্রিয়ার বাইরে রাখার সুযোগ থাকে না। আইন বা মানবাধিকার অনুযায়ী অপরাধ করলে কারও বিচারের ঊর্ধ্বে থাকার সুযোগ নেই। সেক্ষেত্রে এখন বা ভবিষ্যতেও এসব ঘটনায় মামলা বা বিচারের সুযোগ থাকে।
“তবে আমার ধারণা সরকার ঢালাও মামলায় গণহারে আসামি করায় যে সমালোচনা হয়েছে, সেটি এড়াতেই হয়তো এই নির্দেশনা দিয়েছে। এখন আশা করবো ছাত্র জনতার ওপর নির্বিচারে গুলিসহ ফৌজদারি অপরাধগুলোর বিষয়ে তদন্ত করে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেয়া হবে,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।
সূত্র: বিবিসি বাংলা