চট্টগ্রামের জেএমসেন হলের পূজামণ্ডপে ‘ইসলামি গান’ গাওয়া নিয়ে ফেসবুকে আলোচনা—সমালোচনা চলছে। জোর করে স্টেজে উঠে জামায়াত—শিবির গান পরিবেশন করেছে বলে গতকাল রাত থেকেই ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।
তবে আয়োজক কমিটি ও সেখানে উপস্থিত থাকা ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, ওই শিল্পীগোষ্ঠীকে দাওয়াত দিয়েই আনা হয়েছিল। গান পরিবেশনের পর অনুষ্ঠানের উপস্থাপক ধন্যবাদও জানান।
গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ওই শিল্পীগোষ্ঠীর ছয় সদস্য মঞ্চে ওঠেন। তাঁরা শাহ আবদুল করিমের বিখ্যাত গান ‘আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম’ এবং চৌধুরী আবদুল হালিমের ‘শুধু মুসলমানের লাগি আসেনিকো ইসলাম, বিশ্ব মানুষের কল্যাণে স্রষ্টার এই বিধান’—শীর্ষক দুটি গান পরিবেশন করেন।
বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ চট্টগ্রাম মহানগরীর সাধারণ সম্পাদক হিল্লোল সেন উজ্জ্বল বলেন, ‘যখন গান গাওয়া হয়েছে, তখন আমি সেখানে ছিলাম না।
আমাদের জয়েন্ট সেক্রেটারি সজল দত্তের সঙ্গে কথা বলে তাঁরা মঞ্চে উঠেছিলেন। এটি নিয়ে আমরা আলোচনা করছি।’
জোরপূর্বক মঞ্চে ওঠার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের জয়েন্ট সেক্রেটারির (সজল দত্ত) অনুমতি নিয়ে তাঁরা গান গেয়েছেন। তবে আমরা সভাপতি ও সেক্রেটারি এ বিষয়ে জানতাম না।’
সেখানে উপস্থিত থাকা দর্শকেরা জানান, তাঁরা যে গান করবেন সেটি সবাই জানতেন। এমনকি গান গাওয়া শেষ হলে অনুষ্ঠানের উপস্থাপক তাঁদের ধন্যবাদও জানান। কেউ কেউ হাততালিও দেন। গান করতে আসা আর শেষ করা পর্যন্ত কোনো সমস্যাই হয়নি। বরং সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ ছিল।
কিন্তু সমালোচনাটা শুরু হয় যখন ‘শুধু মুসলমানের লাগি আসেনিকো ইসলাম’ গানটির শেষের দুটি লাইন শেয়ার দিয়ে জামায়াত—শিবির জোর করে পূজামণ্ডপে ইসলামিক গান করছে বলে প্রচারণা চালানো হয়।
পূরবী দাশ নামে একটি ফেসবুক আইডি থেকে ছড়ানো ভিডিওটি সবচেয়ে বেশি শেয়ার হয়। সেখানে তিনি দাবি করেন, জামায়াত—শিবিরের কর্মীরা জোর করে পূজামণ্ডপে ইসলামিক গান করছে। তৎক্ষণাৎ ভাইরাল হয় ভিডিওটি।
আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই ভিডিওটি প্রায় ৯ লাখ মানুষ দেখেছেন।
সেখানে অনেকে মন্তব্য করেন, গুজব ছড়ানো হচ্ছে। তবে কেউ কেউ মন্তব্য করেন, দাওয়াত দিলেও পূজামণ্ডপে এমন গান পরিবেশন উচিত হয়নি।
আয়োজক কমিটি ও ইসলামিক কালচারাল একাডেমির অন্তত পাঁচজনের সঙ্গে কথা বলেছে আজকের পত্রিকা।
তাঁরা বলেন, মূলত সম্প্রীতি রক্ষায় পূজা উদ্যাপন পরিষদ ইসলামিক কালচারাল একাডেমিকে গানের দাওয়াত দেয়। ইসলামিক কালচারাল একাডেমিও তাঁদের সম্মান রক্ষা করে গান পরিবেশন করে।
পূজামণ্ডপে পুরো অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রামের সাংবাদিক চক্রবর্তী কমল।
তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ওই ইসলামিক কালচারাল একাডেমিকে দাওয়াত দিয়ে গান গাওয়ানো হয়। তাঁরা গান শুরু করা থেকে শেষ পর্যন্ত কোনো সমস্যাই হয়নি। জোর করেও তাঁরা ওঠেনি। তাঁরা যখন গান শেষ করেন পূজা উদ্যাপন পরিষদের উপস্থাপক ধন্যবাদও দেন।’
চক্রবর্তী কমলের এই বক্তব্যের সত্যতাও পাওয়া যায় চট্টগ্রাম ভিত্তিক নিউজ পোর্টাল সিভয়েস নামে একটি লাইভ ভিডিও থেকে।
ইসলামিক কালচারাল একাডেমির লোকজন প্রথমে স্টেজে ওঠেন। তারপর মাইক্রোফোনে বলেন, ‘পূজা উদ্যাপন পরিষদকে ধন্যবাদ, আমাদের দাওয়াত দেওয়ার জন্য।’
গান শেষে, উপস্থাপক মাইকে বলেন, ‘চট্টগ্রামের ইসলামিক কালচারাল একাডেমিকে অসংখ্য ধন্যবাদ। সম্প্রতির সুন্দর দুটি গান গাওয়ার জন্য।’
বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ চট্টগ্রাম মহানগরীর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সজল দত্তের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল ধরেননি।
এদিকে ওই শিল্পীগোষ্ঠীর সঙ্গে কোনো প্রকারের সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করেছে জামায়াত—শিবির। ইসলামি ছাত্রশিবির চট্টগ্রাম মহানগর উত্তর শাখা অপপ্রচারের প্রতিবাদ জানিয়েছে।
জোরপূর্বক মঞ্চে গান গাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির সভাপতি সেলিম জামান।
তিনি বলেন, ‘জেএম সেন হল পূজা উদ্যাপন কমিটির সহকারী সেক্রেটারি সজল বাবু আমাদের আমন্ত্রণ জানান। তিনি ফোন করে বলেন, আপনারা আসুন, দেশাত্মবোধক গানের জন্য ফ্লোর দেব।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের ছয়জন সেখানে গিয়েছিলেন এবং একটি দেশাত্মবোধক ও একটি সম্প্রীতির গান পরিবেশন করেছেন। সেখানে কোনো জামায়াত নেতা ছিলেন না।
এটি জামায়াতের কোনো অঙ্গ সংগঠন নয়। আমরা কয়েকজন আদর্শিক মানুষ শুদ্ধ সাংস্কৃতিক চর্চার উদ্দেশ্যে ২০১৫ সালে চট্টগ্রামে কালচারাল একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেছি।’
সূত্র: আজকের পত্রিকা