হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়, তবু ডিজিটাল সূচকে পিছিয়ে বাংলাদেশ!

জাতিসংঘের ই-গভর্নমেন্ট ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্সে ১৯৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১০০তম। সূচকটিতে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে ভারত, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ। পেছনে পাকিস্তান।

ডিজিটাল সূচকে পিছিয়ে বাংলাদেশডিজিটাল বাংলাদেশের নামে সাড়ে ১৫ বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করেছে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ।

তবু ডিজিটাল সেবা, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে দুর্নীতি কমানো, মানবসম্পদ ও দক্ষতা উন্নয়ন, আইসিটি সেবা রপ্তানিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ।

আইসিটি বিভাগের হিসাবে, ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বিভাগটি ৫৩টি প্রকল্প ও ৩৪টি কর্মসূচি নিয়েছে। যার মধ্যে ২২টি প্রকল্প এখনো চলমান।

বাকিগুলো বাস্তবায়ন শেষ। সব মিলিয়ে ব্যয় প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা। এর বাইরেও বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ ডিজিটালাইজেশন-সংক্রান্ত প্রকল্প নিয়েছে।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের নেওয়া প্রকল্পের ব্যয় ৪০ হাজার কোটি টাকা।

আইসিটি বিভাগের কর্মকর্তা ও খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আইসিটি খাতে অনেক প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, যেগুলোর তেমন কোনো সুফল নেই।

সম্ভাবনার নামে ‘গালগল্প’ শুনিয়ে অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে।

তারপর দেখা গেছে, সেই অবকাঠামো তেমন কোনো কাজে লাগছে না। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে প্রত্যাশার চেয়ে অনেক কম। প্রশিক্ষণের নামে শত শত কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। তাতেও সুফল কম।

আইসিটি বিভাগের প্রকল্পগুলোয় অতিরিক্ত ব্যয় ধরা, ঘনিষ্ঠ লোকদের কাজ দেওয়া, চাকরিতে স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি ও অনিয়মের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ পলক ও তাঁর কাছের লোকদের যখনই কোনো কিছু মাথায় আসত, তাঁরা সেটাকে প্রকল্প বানিয়ে ফেলতেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নাম দিয়ে নেওয়া হয়েছিল ১১টি প্রকল্প।

প্রশ্নহীনভাবে প্রকল্প অনুমোদন করাতে এই কৌশল নেওয়া হতো।

আইসিটি ও টেলিযোগাযোগ খাতে সবকিছুর মূল নিয়ন্ত্রক ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়।

তিনি ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা। বেশির ভাগ সময় বিদেশে থেকে তিনি এ দায়িত্ব পালন করতেন।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ পলক ও তাঁর কাছের লোকদের যখনই কোনো কিছু মাথায় আসত, তাঁরা সেটাকে প্রকল্প বানিয়ে ফেলতেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নাম দিয়ে নেওয়া হয়েছিল ১১টি প্রকল্প। প্রশ্নহীনভাবে প্রকল্প অনুমোদন করাতে এই কৌশল নেওয়া হতো।

২০২২ সালের ডিসেম্বের সজীব ওয়াজেদ জয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টে লেখেন, ১৩ বছরে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশের ব্যাপক উন্নতি হয়েছে।

প্রত্যন্ত গ্রামেও বর্তমানে ডিজিটাল সেন্টার থেকে সেবা প্রদান করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, অনেক দেশ বাংলাদেশের মতো ডিজিটাল দেশ গঠনের স্লোগান দেয়নি, এত বিপুল ব্যয়ও করেনি।

তারা বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে আছে। জাতিসংঘের ই-গভর্নমেন্ট ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্স (ইজিডিআই) ২০২৪–এ ১৯৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১০০তম।

এ সূচকে ভারত (৯৭), শ্রীলঙ্কা (৯৮) ও মালদ্বীপ (৯৪) বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে আছে। পিছিয়ে পাকিস্তান (১৩৬)। অনলাইন সেবা, টেলিকম অবকাঠামো ও দক্ষ মানবসম্পদ—এই তিন মাপকাঠি বিবেচনায় সূচকটি তৈরি করে জাতিসংঘ।

আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়ন (আইটিইউ) চলতি বছরের জুনে আইসিটি ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্স (আইডিআই) ২০২৪ প্রকাশ করে।

সেখানে দেখা যায়, বাংলাদেশে প্রায় ৩৯ শতাংশ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে। মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, ভিয়েতনাম ও ভুটান এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে।

পাকিস্তান কিছুটা পিছিয়ে। সূচকে ভারতের তথ্য নেই।

জাতিসংঘের ই-গভর্নমেন্ট ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্স (ইজিডিআই) ২০২৪–এ ১৯৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১০০তম।

এ সূচকে ভারত (৯৭), শ্রীলঙ্কা (৯৮) ও মালদ্বীপ (৯৪) বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে আছে।

পিছিয়ে পাকিস্তান (১৩৬)। অনলাইন সেবা, টেলিকম অবকাঠামো ও দক্ষ মানবসম্পদ—এই তিন মাপকাঠি বিবেচনায় সূচকটি তৈরি করে জাতিসংঘ।

বিশ্বব্যাংকের ‘ডিজিটাল অগ্রগতি ও প্রবণতা প্রতিবেদন ২০২৩’ বলছে, বাংলাদেশে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর হার প্রায় ৫২ শতাংশ, যা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে কম।

ইন্টারনেটের গতি, ডিজিটাল জীবনমান, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) ব্যবহার ও ফ্রিল্যান্সিংয়েও সমপর্যায়ের অর্থনীতির দেশগুলোর চেয়ে পিছিয়ে বাংলাদেশ।

সচিবালয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) পর্যালোচনা সভায় ৩ সেপ্টেম্বর উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগের আমলে টেলিযোগাযোগ এবং আইসিটি খাতে মোট ৬৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে।

তারপরও বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে। তিনি বলেন, বিভিন্ন সূচক দেখলে বোঝা যায়, ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রকৃত সুযোগ-সুবিধা দেশের জনগণ পাননি। বরং এ ক্ষেত্রে ব্যাপক অনিয়ম করা হয়েছে।

ডিজিটাল বাংলাদেশ: রূপকল্পের পর প্রকল্প

২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গঠনের রূপকল্প ঘোষণা করে।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প নেওয়া শুরু হয়।

আইসিটি বিভাগে উল্লেখযোগ্য সময় মন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন প্রয়াত সৈয়দ আবুল হোসেন (৫ ডিসেম্বর, ২০১১-২৩ জুলাই, ২০১২), মোস্তফা ফারুক মোহাম্মেদ (১৬ সেপ্টেম্বর ২০১২-১২ জানুয়ারি, ২০১৪) এবং আবদুল লতিফ সিদ্দিকী (১২ জানুয়ারি, ২০১৪-১২ অক্টোবর, ২০১৪)।

২০১৪ সাল থেকে টানা ১০ বছরের বেশি সময় আইসিটি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন জুনাইদ আহ্‌মেদ।

তাঁর বিরুদ্ধেই যথেচ্ছ প্রকল্প নেওয়া এবং অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ বেশি। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হন তিনি।

আওয়ামী লীগ গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে ঘোষিত ইশতেহারে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গঠনের রূপকল্প ঘোষণা করে।

যদিও তখন প্রশ্ন উঠেছিল, ডিজিটাল বাংলাদেশের লক্ষ্য পূরণ না করে স্মার্ট বাংলাদেশ গঠন করার স্লোগান দেওয়া কেন।

বিভিন্ন সূচক দেখলে বোঝা যায়, ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রকৃত সুযোগ-সুবিধা দেশের জনগণ পাননি। বরং এ ক্ষেত্রে ব্যাপক অনিয়ম করা হয়েছে।- উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম

২০২২ সালের ডিসেম্বরে জুনাইদ আহ্‌মেদ গনমাধ্যমকে বলেছিলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ অর্জনে সরকার শতভাগ সফল। সরকারি সেবাগুলো মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছেছে।

প্রযুক্তিভিত্তিক শিল্পের বিকাশ ঘটেছে। করোনা মহামারিতে পুরো ব্যবস্থা অনলাইনে চালু ছিল।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বাংলাদেশে ইন্টারনেটের ব্যবহার বেড়েছে। তথ্যপ্রযুক্তিতে উন্নতি হয়েছে।

সরকারি সেবায় তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে। কিন্তু সেটা সব দেশেই হয়েছে। বাংলাদেশ কি অন্যদের চেয়ে এগিয়ে যেতে পেরেছে, এ প্রশ্নের উত্তর হলো ‘না’।

দেশীয় প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান ডেটাসফট সিস্টেমসের প্রেসিডেন্ট এম মনজুর মাহমুদ গনমাধ্যমকে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের প্রথম আমলে ভালো কিছু কাজের উদ্যোগ ছিল।

কিন্তু পরের ১০ বছরে লুটপাট হয়েছে। তিনি বলেন, বিগত সরকার শুধু অবকাঠামো করেছে। কোনো প্রকল্প বা উদ্যোগ গ্রহণের আগে আইসিটি খাতের অংশীদারদের পরামর্শ নেওয়া হতো না।

৯২টি এ ধরনের স্থাপনা নির্মাণের কথা ছিল। এর মধ্যে ৩টি হাইটেক পার্ক, ৩টি সফটওয়্যার পার্ক এবং ৪টি ইনকিউবেশন সেন্টার চালু রয়েছে।

অনেকগুলো নির্মণাধীন। নির্মাণ শেষ হওয়া ও নির্মাণাধীন প্রকল্পে মোট ব্যয় ৮ হাজার ১৮৬ কোটি টাকা।

‘গালগল্প’ শুনিয়ে অবকাঠামো

আওয়ামী লীগ সরকার জেলায় জেলায় ‘হাইটেক ও সফটওয়্যার পার্ক’ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিল দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের কথা বলে। দক্ষতা উন্নয়নে তৈরি করা হয় ‘ইনকিউবেশন সেন্টার’।

৯২টি এ ধরনের স্থাপনা নির্মাণের কথা ছিল। এর মধ্যে ৩টি হাইটেক পার্ক, ৩টি সফটওয়্যার পার্ক এবং ৪টি ইনকিউবেশন সেন্টার চালু রয়েছে।

অনেকগুলো নির্মণাধীন। নির্মাণ শেষ হওয়া ও নির্মাণাধীন প্রকল্পে মোট ব্যয় ৮ হাজার ১৮৬ কোটি টাকা।

হাইটেক পার্কগুলোয় দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। ইনকিউবেশন সেন্টারগুলো তেমন কাজে লাগছে না।

যেমন যশোরে ৩০৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছিল শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে এটির উদ্বোধন করা হয়।

তার আগে জুনাইদ আহ্‌মেদ গণমাধ্যমে বলেছিলেন, যশোর হাইটেক পার্ক হবে বাংলাদেশের ‘সিলিকন ভ্যালি’। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি বহু প্রযুক্তি কোম্পানির আঁতুড়ঘর। গবেষণা ও উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে সেটি অদ্বিতীয়।

শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক কার্যত ব্যর্থ হয়েছে। সেটার খরচ ওঠাতে এখন বিয়ের অনুষ্ঠানও আয়োজন হয়।

আইসিটি খাতে ৫ বিলিয়ন (৫০০ কোটি) ডলার রপ্তানি আয়ের গল্প শোনানো হয়েছিল, তা ১ বিলিয়নও নেওয়া যায়নি।- তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সংগঠন বেসিসের সাবেক সহসভাপতি ফারহানা এ রহমান

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল ও কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক এম রোকনুজ্জামান গনমাধ্যমকে বলেন, আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন এসব ভবন থেকে জাতি কী পেল? তাঁর মতে, এসব প্রকল্পে ঋণদাতাদেরও দায়বদ্ধতা রয়েছে।

প্রকল্প বাস্তবায়িত হওয়ার পর তারা মূল্যায়ন করেছে কি না, সে প্রশ্ন সামনে আসা উচিত। পরামর্শকদেরও প্রশ্ন করা উচিত, কী বুঝে এমন অবকাঠামো তৈরি হলো।

ইউনিয়ন পর্যায়ে দ্রুতগতির ব্রডব্যান্ড সেবা পৌঁছাতে আইসিটি বিভাগের সংস্থা বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) ইনফো সরকার ১, ২ ও ৩ নামে ২০১০ থেকে ২০২৩ সালে ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন মেয়াদে তিনটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করে।

মোট ব্যয় হয় ৩ হাজার ৭৫৬ কোটি টাকা। এরপর ডিজিটাল সংযোগ স্থাপন (ইডিসি) নামে ৫ হাজার ৯২৩ কোটি টাকার আরও একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে আইসিটি অধিদপ্তর থেকে।

যে প্রকল্পের অন্যতম কাজ ইউনিয়ন এবং গ্রামপর্যায়ে ব্যবহারকারী পর্যন্ত ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ প্রদান করা।

যদিও ইনফো সরকার প্রকল্পের সুফল এবং ইডিসি প্রকল্পের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। বাংলাদেশ ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহারে পিছিয়ে।

প্রশিক্ষণের নামে ‘লুটপাট’

আইসিটি বিভাগের প্রকল্পগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ১১টি প্রকল্প ও ১৫টি কর্মসূচি ছিল প্রশিক্ষণসংক্রান্ত। ২০০৯ সাল থেকে এসব প্রকল্পে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে।

ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ, ভাষা প্রশিক্ষণ, সাইবার প্রশিক্ষণ, ডিজিটাল লিটারেসি প্রশিক্ষণ ইত্যাদি নামে বছর বছর প্রকল্প চলত।

অভিযোগ রয়েছে, প্রশিক্ষণের কাজ দেওয়া হতো সরকারের ঘনিষ্ঠদের। নামকাওয়াস্তে প্রশিক্ষণ দিয়ে তারা মূলত টাকা আত্মসাৎ করত।

যেমন ২০১৪ সালে ‘লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট’ নামের একটি প্রকল্প নেয় আইসিটি বিভাগ, যা শেষ হয় ২০২৩ সালে।

মোট ব্যয় হয় ৩২০ কোটি টাকা। প্রকল্পটি নিয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীন বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) ২০২০ সালে একটি নিবিড় পরিবীক্ষণ প্রতিবেদন দেয়।

সেখানে বলা হয়, ফ্রিল্যান্সার তৈরির জন্য নেওয়া এই প্রশিক্ষণে মেয়াদ যথেষ্ট নয় এবং দক্ষ প্রশিক্ষক দরকার।

আইসিটিভিত্তিক প্রদত্ত প্রশিক্ষণের জন্য অপরিহার্য উপাদান ল্যাপটপ ও কম্পিউটার, ইন্টারনেট, বিদ্যুৎ–সুবিধার ঘাটতি ছিল।

আইএমইডি ৫০০ জনের ওপর জরিপ করেছিল। তাতে অর্ধেকের বেশি প্রশিক্ষণ গ্রহণকারী বলেছেন, ফ্রিল্যান্সিং করে অর্থ আয়ের জন্য প্রশিক্ষণের মেয়াদ যথেষ্ট নয়।

আইসিটি বিভাগের প্রকল্পগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ১১টি প্রকল্প ও ১৫টি কর্মসূচি ছিল প্রশিক্ষণসংক্রান্ত।

২০০৯ সাল থেকে এসব প্রকল্পে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে।

ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ, ভাষা প্রশিক্ষণ, সাইবার প্রশিক্ষণ, ডিজিটাল লিটারেসি প্রশিক্ষণ ইত্যাদি নামে বছর বছর প্রকল্প চলত।

অ্যাপ কাজে লাগে না

আইসিটি বিভাগের মোবাইল গেমস, অ্যাপস তৈরি ও প্রশিক্ষক তৈরির জন্য ২০১৩ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত ভিন্ন ভিন্ন সময়ে তিনটি আলাদা কর্মসূচি ছিল, যার ব্যয় ছিল প্রায় ২৪ কোটি টাকা।

এরপর ২০১৬ সাল থেকে চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে একই কাজের জন্য একটি প্রকল্প নেওয়া হয়, যা চলমান আছে।

কর্মসূচির আওতায় বানানো ৬০০টি অ্যাপের একটিও কোনো কাজে আসেনি।

অনেক সময় একই কাজের জন্য একাধিক প্রকল্প নেওয়া হতো।

যেমন স্টার্টআপদের (নতুন প্রযুক্তিভিত্তিক ব্যবসায়িক উদ্যোগ) সহায়তা করতে আইডিয়া নামের একটি ১০ বছরের প্রকল্প রয়েছে।

আবার আইডিয়ার মতো একই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের কথা বলে হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের অধীনে ‘ডিজিটাল উদ্যোক্তা এবং উদ্ভাবন ইকো-সিস্টেম উন্নয়ন’ নামে ৩৫৩ কোটি টাকার আরেকটি প্রকল্প চলছে।

তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সংগঠন বেসিসের সাবেক সহসভাপতি ফারহানা এ রহমান গনমাধ্যমকে বলেন, ১৫ বছরে আইসিটি খাতে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দলীয় কিছু প্রতিষ্ঠান আর ব্যক্তির উন্নতি হয়েছে।

খাতটি প্রত্যাশা অনুযায়ী এগোতে পারেনি। তিনি বলেন, আইসিটি খাতে ৫ বিলিয়ন (৫০০ কোটি) ডলার রপ্তানি আয়ের গল্প শোনানো হয়েছিল, তা ১ বিলিয়নও নেওয়া যায়নি।

আইসিটি শিক্ষার ১৩৫৩ কোটি টাকার প্রকল্প শেষ, কাজের কাজ কিছুই হয়নি

নেই অবকাঠামোগত সুবিধা। এরই মধ্যে মাধ্যমিক স্তর থেকে বাধ্যতামূলক করা হয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি)। উচ্চ মাধ্যমিকে আগে থেকেই ছিল বাধ্যতামূলক।

কোনো ধরনের প্রস্তুতি ছাড়াই ২০১২ সালের জাতীয় শিক্ষাক্রমে আইসিটি বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত হয়।

ওই বছরই ষষ্ঠ শ্রেণিতে এবং ২০১৩ সালে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে আইসিটি বিষয়টি বাধ্যতামূলক করা হয়। অথচ সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে তখনো সহকারী শিক্ষক (আইসিটি) পদ সৃষ্টিই হয়নি।

সরকারি কলেজে ২০১৬ সালে মাত্র ২৫৫টি পদ সৃষ্টি হয়। বেসরকারি কলেজে এ বিষয়ের পদ সৃষ্টি হয় ২০১৮ সালে। এই বিষয়ে মান উন্নয়নের জন্য ২০১৬ সালে নেয়া হয় প্রকল্প।

যার বাজেট ধরা হয় এক হাজার ৩৫৩ কোটি টাকা। এই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে চলতি বছরের জুলাই মাসে। কিন্তু বিপুল অঙ্কের অর্থ ব্যয় হলেও বাস্তবিক অর্থে উপকারে এসেছে যৎসামান্যই।

প্রকল্পের উদ্দেশ্যে বলা হয়- শ্রেণি পাঠদান প্রক্রিয়া আধুনিকায়নের মাধ্যমে মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের উচ্চমানের দক্ষতা নিশ্চিতকরণ, একটি দক্ষ ও বিজ্ঞানমনস্ক টিচার্সপুল তৈরি করা, আইসিটিভিত্তিক জ্ঞান বিকাশের লক্ষ্যে শিক্ষা বিজ্ঞানের সঙ্গে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সমন্বয় সাধন, শিক্ষাক্ষেত্রে স্টেকহোল্ডারদের জন্য একটি প্রেরণাদায়ী ধারার সূচনা করা, শিক্ষাক্ষেত্রে টেকসই ও অর্জনযোগ্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করা।

প্রকল্প শুরু হয় ২০১৬ সালে। যার আওতাধীন ছিল আইসিটি বিষয়ক ১৩ ধরনের প্রশিক্ষণ বাস্তবায়ন। যাতে প্রশিক্ষণ পান পাঁচ লাখ ২১ হাজার ১১২ জন।

মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম সৃজন করা হয় ৩৬ হাজার ৮৪টি। যাতে থাকার কথা ডেস্কটপ কম্পিউটার, ইউপিএস, পেনড্রাইভ, স্মার্ট টিভি ও রাউটার।

প্রকল্পের আওতায় ৬৬৮টি ট্রেনিংরুম ও কনফারেন্স রুম সৃজন করা হয়।

প্রকল্পের অধীনে নায়েম, টিটিসি, এইচএসটিটিআই, বিএমটিটিআই ২১টি করে ১০৫টি মাল্টিমিডিয়া প্রশিক্ষণ কক্ষ নির্মাণ করা হয়।

পিআইইউ’তে দুটি করে চারটি, নয়টি আঞ্চলিক অফিসে একটি করে, ৬৪ জেলা শিক্ষা অফিসে একটি করে ও ৪৯০টি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে একটি করে মাল্টিমিডিয়া কনফারেন্স কক্ষ নির্মাণ করা হয়।

মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম সৃজনে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমে দেয়া হয় একটি করে ডেক্সটপ কম্পিউটার, স্মার্ট টিভি, ইউপিএস, ওয়্যারলেস রাউটার পেনড্রাইভ।

মাল্টিমিডিয়া প্রশিক্ষণ কক্ষে দেয়া হয় একটি করে ডেক্সটপ কম্পিউটার, স্মার্ট টিভি, ইউপিএস, ইন্টারনেট মডেম ও স্টেরিও স্পিকার। মাল্টিমিডিয়া কনফারেন্স রুমে দেয়া হয় একটি করে স্মার্ট টিভি ও স্টেরিও স্পিকার।

বিপুল এই অর্থব্যয়ে প্রকল্প আদতে কতোটুকু উপকারে এসেছে এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। প্রকল্পের আওতায় নানা কথা হলেও শিক্ষক, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম ও কম্পিউটার ল্যাবের অভাব অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে।

আবার যেসব উপকরণ দেয়া হয় তার মান নিয়েও আছে প্রশ্ন। কয়েক বছর না যেতেই অনেক উপকরণ নষ্ট হয়ে গেছে কিংবা নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) সর্বশেষ তথ্যে উঠে এসেছে এই প্রকল্পের দুরবস্থার চিত্র।

সরকারি কলেজে আইসিটি বিষয়ে পদ সৃষ্টি হয়েছে ২৫৫টি।

বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) ২০২৩’র তথ্যানুযায়ী দেশে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অধীনে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে ২৩ হাজার ৭৮৯টি।

এর মধ্যে মাধ্যমিক বিদ্যালয় (ষষ্ঠ থেকে দশম) ১৮ হাজার ৯৬৮টি এবং স্কুল অ্যান্ড কলেজ এক হাজার ৪৮০টি। কলেজ রয়েছে তিন হাজার ৩৪১টি। মাদ্রাসা রয়েছে নয় হাজার ২৫৯টি।

এসবের মধ্যে দেশের প্রায় সাড়ে আট হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নেই মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম। কম্পিউটার ল্যাব তৈরি হয়নি তিন হাজার ৮৫৮ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।

ব্যানবেইসের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, দেশের তিন হাজার ৮৫৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ব্যবহারের সুযোগ নেই। এর মধ্যে বিদ্যালয় দুই হাজার ২২১টি, কলেজ ১৭৬টি ও মাদ্রাসা এক হাজার ৪৬১টি।

রংপুর জেলার একটি স্বনামধন্য একটি প্রতিষ্ঠানের আইসিটি প্রশিক্ষণ নেয়া একজন শিক্ষক বলেন, আমি পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক। বিজ্ঞানের ক্লাসও নিতে হয়। এই পদে যেহেতু শিক্ষকের পদ সৃষ্টি হয়নি তাই আমাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

এই বিষয়ের জন্য একজন ডেডিকেটেড শিক্ষক প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিষয়টি যেহেতু গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের ডেকে প্রশিক্ষণ না দিয়ে সেই বিষয়ের শিক্ষক প্রয়োজন।

আবার একই জেলার আইসিটি বিষয়ক আরেকজন শিক্ষক বলেন, আমার প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৮৫০ শিক্ষার্থী।

একক শিক্ষকের পক্ষে এটা চালানো খুবই দুষ্কর। স্কুলে ৮টি কম্পিউটার রয়েছে। এরমধ্যে চারটি অকেজো। একটি ঠিকমতো কাজ করে না। এখন কোনোরকম কাজ চালানো হচ্ছে।

সর্বশেষ জাতীয় শিক্ষানীতিতে বলা হয়, মাধ্যমিক পর্যায়ে প্রবেশের আগেই সকল শিক্ষার্থীকে তথ্যপ্রযুক্তি ও তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে শিক্ষিত করা হবে।

একইসঙ্গে, শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান ও গণিত বিষয়ের সঙ্গে কম্পিউটার বিষয় নিয়ে পড়াশোনার সুযোগ করে দেয়া হবে; যা হবে হাতে-কলমে। আর শেখানোর এ কাজকে সহজ করতে যা করা হবে ভিজ্যুয়াল (অডিও, ভিডিও এবং সচিত্র) মাধ্যমে অর্থাৎ মাল্টি-টাস্কিং সুবিধা-সম্পন্ন মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমে।

সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে ‘এটুআই’ প্রকল্পের আওতায় এ প্রকল্প চালু করা হয় ২০১১ সালে।

তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১২ সালের মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমের উদ্বোধন করেন। ওই প্রকল্পের আওতায় দেশে ২০ হাজার ৫০০ স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় একটি করে কম্পিউটার ল্যাব ও মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন করা হয়েছিল।

প্রতিষ্ঠানগুলোতে একটি ল্যাপটপ, ইন্টারনেট মডেম, স্ক্রিনসহ মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর এবং সাউন্ড সিস্টেম প্রদান করা হয়েছিল। এরপর ২০১৫ সালে প্রকল্পটি শেষ হলে ‘আইসিটি ফেজ-২’ প্রকল্প হাতে নেয় সরকার।

২০১৬ সালে নেয়া ওই প্রকল্পের লক্ষ্য ছিল দেশের ৩১ হাজার ৩৪০টি ডিজিটাল ক্লাসরুম চালু করা।

এ প্রকল্পটি যাত্রা শুরু করে ২০১৭ সালে এবং প্রকল্পটি সরকারি খাতে স্থানান্তর করা হয় ২০২০ সালে। তখন মাউশি’র মনিটরিং অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন উইংয়ের বাস্তবায়ন ও মনিটরিং এ দায়িত্ব পায়।

তবে দেশের ২৫ হাজারের বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাল্টিমিডিয়া উপকরণের কোনো অস্তিত্ব বা হদিস পাওয়া যায়নি। এ কার্যক্রমকে সফল করতে ও সক্রিয় রাখতে করা হয়েছিল সমন্বিত মনিটরিং কমিটি।

যাতে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল জেলা প্রশাসক ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে। দেশের মাধ্যমিক স্তরের যেসব প্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম রয়েছে তার থেকেও সাফল্য আনা যাচ্ছে না দক্ষ শিক্ষক না থাকার কারণে।

পর্যবেক্ষণ বলছে, মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষক ছাড়াও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ, ধীরগতির ইন্টারনেট বা ইন্টারনেট না থাকা, প্রয়োজনীয় অবকাঠামো এবং সার্বিক দক্ষতার অভাবে প্রাতিষ্ঠানিক সাফল্য আসছে না।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ বলেন, আইসিটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটির গুরুত্ব বিবেচনায় বিদ্যমান সমস্যাগুলো সমাধান করা প্রয়োজন।

আধুনিক প্রজন্ম তৈরি করতে চাইলে হাতে-কলমে যাতে শিক্ষার্থীরা শিখতে পারে সেই বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে।

ডিজিটাল সূচকে সমঅর্থনীতির দেশের চেয়ে পিছিয়ে বাংলাদেশ

বৈশ্বিক ডিজিটাল সূচকে বাংলাদেশ ১০০ এর মধ্যে ৬২ স্কোর করেছে। আইসিটি অগ্রগতিতে বাংলাদেশের এই স্কোর অনেক সমঅর্থনীতির চেয়ে কম।

ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের আইসিটি ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্স অনুযায়ী, বৈশ্বিক গড় স্কোর ৭৪ দশমিক ৮।

নিম্নমধ্যম আয়ের দেশগুলোর গড় স্কোর ৬৪ দশমিক ৮। সূচকে বাংলাদেশকে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।

সূচকে বৈশ্বিক গড় ও নিম্নমধ্যম আয়ের দেশগুলোর গড় স্কোর দুটোতেই পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, ভিয়েতনাম ও ভুটানের পরেই বাংলাদেশের অবস্থান।

প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের চেয়ে কিছুটা পিছিয়ে আছে কেবল পাকিস্তান। সূচকে ভারতকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

দশটি সূচকের মধ্যে সাতটিতেই নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশগুলোর গড় স্কোরের চেয়ে বাংলাদেশের স্কোর কম।

তবে বাংলাদেশ মোবাইল নেটওয়ার্ক কভারেজে (থ্রিজি এবং ফোরজি) ভালো করেছে। মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সাবস্ক্রিপশনে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশগুলোর গড় সূচককে ছাড়িয়ে গেছে।

তবে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে এখনো পিছিয়ে আছে।

বাংলাদেশে মানুষের মধ্যে ব্যক্তি পর্যায়ে ইন্টারনেট ব্যবহারের হার ৩৮ দশমিক ৯ শতাংশ এবং ৩৮ দশমিক ১ শতাংশ পরিবারে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

সুত্র – প্রথমআলো , মানবজমিন

মতামত দিন