বাংলাদেশের ইলিশ মাছের চাহিদা ও এর রপ্তানি নিয়ে রাজনৈতিক আলোচনা বেশ দীর্ঘদিন ধরে চলমান।
দেশে ইলিশের মূল্যবৃদ্ধি এবং প্রতিবেশী দেশ ভারতে ইলিশ রপ্তানির কারণে জনগণের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে। বিগত বছরগুলোতে ইলিশের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ২০-৩০%।
দেশের বাজারে চাহিদা এবং সরবরাহের ফারাকের কারণে ইলিশ এখন রাজনৈতিক অর্থনীতির একটি প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ইলিশ রপ্তানি ও রাজনৈতিক প্রভাব:
২০২৩ সালে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৫,০০০ মেট্রিক টন ইলিশ ভারতে রপ্তানি করা হয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে।
যদিও দেশে ইলিশের চাহিদা বেশি এবং দাম ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে, তবে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য রপ্তানি করা হয়েছে।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিদের জন্য ইলিশ একটি বিশেষ খাবার, যা বাংলাদেশের সাথে ভারতের সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়।
দাম বৃদ্ধির কারণ:
- দেশে ইলিশের মূল্যবৃদ্ধির পেছনে কয়েকটি মূল কারণ রয়েছে:
- প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে মাছের কম উৎপাদন।
- প্রজনন মৌসুমে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা।
- মজুতদারি ও কালোবাজারির মাধ্যমে কৃত্রিম সংকট তৈরি।
২০২৩ সালে ইলিশের দাম প্রায় ৩০% বৃদ্ধি পেয়েছে, যেখানে ২০২২ সালে মোট উৎপাদন ছিল প্রায় ৫.৫ লাখ মেট্রিক টন।
দেশীয় বাজারে সরবরাহ কমে যাওয়ার ফলে দাম বাড়ছে, এবং ইলিশ রপ্তানির কারণে এই সংকট আরও বাড়ছে।
বর্তমান সরকারের করণীয়:
বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারের করণীয় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া:
১. রপ্তানি নীতি পুনর্বিবেচনা: ইলিশ রপ্তানির ক্ষেত্রে দেশের বাজারের সরবরাহ ও চাহিদার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে রপ্তানির পরিমাণ নির্ধারণ করা উচিত। রপ্তানির আগে দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।
২. মূল্য নিয়ন্ত্রণ ও বাজার ব্যবস্থাপনা: ইলিশের বাজারে কালোবাজারি ও মজুতদারি রোধ করতে শক্তিশালী বাজার ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন। সরবরাহ চেইন নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
৩. উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ: ইলিশের প্রজনন মৌসুমে সঠিকভাবে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে হবে। এছাড়া, মাছের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য নদী ও উপকূলীয় অঞ্চলে আরও কার্যকর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা প্রয়োজন।
৪. কূটনৈতিক সমঝোতা: ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিকভাবে ইলিশ রপ্তানির বিষয়টি আলোচনা করে একটি ভারসাম্যপূর্ণ নীতি তৈরি করা প্রয়োজন, যাতে দুই দেশের সম্পর্ক বজায় থাকে এবং দেশের জনগণ সাশ্রয়ী মূল্যে ইলিশ পেতে পারে।
এই পদক্ষেপগুলো সরকারের জন্য প্রয়োজনীয়, যাতে দেশের ইলিশ শিল্প সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয় এবং জনগণের ক্রয়ক্ষমতা বজায় থাকে।
—
তথ্যসূত্র:
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (BBS)
ফারুক এ ফেরদৌস, সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও, এগ্রোস এর linkedin থেকে নেওয়া।