৫ ই আগস্ট ২০২৪ ছাত্র-জনতার প্রবল গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়েছে প্রায় দুই মাস হলো। এদিন এক পর্যায়ে জরুরী অবস্থা ভেঙ্গে বিক্ষুদ্ধ ছাত্র-জনতার মিছিল গণ ভবনের দিকে এগিয়ে আসলে জানা বাঁচাতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে হেলিকপ্টারে ভারতের দিকে উড়াল দেয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যদিও তিনি বলেছিলেন শেখ হাসিনা পালায়না।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স এই তথ্য জানিয়ে গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে লিখেছে, শেখ হাসিনাকে দেশ ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেছে ভারত।
এর আগে রয়টার্স বলেছিল, সোমবার দুপুর আড়াইটার দিকে একটি সামরিক হেলিকপ্টারে ছোট বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে গণভবন ছেড়ে যান শেখ হাসিনা।
বিকাল পৌনে ৪টার দিকে সেনাসদরে জনগণের উদ্দেশে ভাষণ দেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। তখন শেখ হাসিনার পদত্যাগের কথা নিশ্চিত করেন তিনি।
সিএনএন এর সহযোগী সংবাদমাধ্যম নিউজ এইটিন লিখেছে, শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে বহনকারী সামরিক হেলিকপ্টারটি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলা পৌঁছেছে।
সাড়ে ১৫ বছর বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা তুমুল গণআন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করেন।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ৩৬ দিন আগে শিক্ষার্থীদের যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল তা সরকার পতনের আন্দোলনে রূপান্তরিত হওয়ার পর দেশজুড়ে সংঘাত আর তিন শতাধিক মানুষের মৃত্যুর মধ্যে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা ছাড়তে হয়।
হাসিনা এখন কোথায় আছে এ নিয়ে আছে ব্যাপক কৌতূহল।একটি সূত্র বলছে তিনি এখন দিল্লি অবস্থান করছেন, তবে তিনি দিল্লির ঠিক কোথায় আছেন, সেটা স্পষ্ট নয়। এ নিয়ে ভারত সরকার থেকে তেমন কিছু জানা যায়নি। তবে তার অবস্থান নিয়ে বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারতের কূটনীতিক পাড়ায় চলছে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা।
এমন পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনার অবস্থান নিয়ে ১৮ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিনান্সিয়াল টাইমস, যেখানে বলা হয়েছে, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের সাথে দিল্লিতে আছেন পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এমনকি তাকে একটি পার্কেও ঘুরতে দেখা গেছে বলে জানায় কয়েকটি সূত্র,তবে তা কতটুকু বিশ্বাসযোগ্য সন্দেহের অবকাশ থেকে যায়।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতা শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন অভিমুখে লংমার্চ শুরু করলে তিনি পদত্যাগ করেন এবং সামরিক বিমানে করে ভারতে আশ্রয় নেন। এরপর থেকে তিনি ভারতে অবস্থান করছেন। শেখ হাসিনাকে নিয়ে এখন পর্যন্ত এটিই নিশ্চিত করেছে মোদি সরকার। এর বেশি কোনো তথ্য দিতে রাজি হচ্ছে না দিল্লি। কিন্তু হাসিনার অবস্থান নিয়ে জল্পনা থেমে নেই।
বিভিন্ন বিশ্বাসযোগ্য সূত্রের বরাতে ভারতীয় এলিট শ্রেণি ব্যক্তিগতভাবে দাবি করছেন, শেখ হাসিনা এখন ভারতীয় সরকারের একটি সেফ হাউসে রয়েছেন। তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলুও তার সঙ্গে আছেন। শুধু তাই নয়, তাকে অন্যান্য পলাতক নেতাকর্মীসহ দিল্লির অন্যতম অভিজাত পার্ক লোদি গার্ডেনে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে জানায়।
উল্লেখ্য, আওয়ামীলীগ সরকারের প্রধান বিদেশি সমর্থক ছিল মোদি সরকার। ভারত সরকার আওয়ামীলীগ ও হাসিনাকে তাদের বিশ্বস্ত মিত্র মনে করে। তবে এখন তারা হাসিনাকে আশ্রয় দিলেও এ বিষয়ে তেমন উচ্চবাচ্য করছে না। দিল্লির এমন অবস্থানের পেছনে কয়েকটি কারণও উল্লেখ করেছে ফিনান্সিয়াল টাইমস। যেমন, গত জুলাই ও আগস্ট মাসে আন্দোলনের সময় শত শত মানুষ হত্যায় শেখ হাসিনার নামে অনেক মামলা হয়েছে। আর ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি বন্দী প্রত্যর্পণ চুক্তি রয়েছে। ২০১৩ সালে হাসিনা নিজেই এই চুক্তি করেছিলেন। এখন তাকে দেশে ফেরত এনে বিচারের আওতায় আনতে এই চুক্তি কাজে লাগতে পারে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্র্বতী সরকার।
সূত্র:ফিনান্সিয়াল টাইমস