তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কা, সমরাস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে ইলেকট্রনিক ডিভাইস!

ইউক্রেন যুদ্ধের দাবানল বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে ফ্রান্স সরকার, আর এ খবর জানিয়েছে ফরাসি গণমাধ্যম লামন্ড।

এদিকে পার্সটুডে ফার্সি জানিয়েছে, বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কো বলেছেন: তার দেশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা হবে।

তিনি তার দেশে যেকোনো ধরনের হামলার বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন: “সকল শত্রু, প্রতিদ্বন্দ্বী এবং যারা এখনও বুঝে উঠতে পারেননি তাদের সবাইকে এ ব্যাপারে হুঁশিয়ার করে দিতে চাই যে, ‘এই কাজ করবেন না।’ বেলারুশে হামলা চালানোর অর্থ হবে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু করে দেয়া।”

সাম্প্রতিক সময়ে আমেরিকাসহ পশ্চিমা দেশগুলো ইউক্রেনকে সরবরাহ করা দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রগুলো রাশিয়ার গভীর অভ্যন্তরে হামলা চালানোর কাজে ব্যবহার করতে কিয়েভকে অনুমতি দিয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে তুমুল উত্তেজনা চলছে এবং রাশিয়া এ ব্যাপারে পাশ্চাত্যকে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছে।

এ অবস্থায় ইউরোপের কোনো কোনো দেশ এ ব্যাপারে শঙ্কিত হয়ে উঠেছে যে, ইউক্রেন যুদ্ধের এতটা বিস্তৃতি ঘটতে পারে যে, সে যুদ্ধের আগুন ইউরোপকেও গ্রাস করে ফেলতে পারে।

রুশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ দুমার স্পিকার ভোজিস্লাভ ভলোদিন এক বিবৃতিতে বলেছেন: মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শোলৎজ ও ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাকরন যুদ্ধকে উস্কে দিতে পারেন যার পরিণতি হতে পারে ভয়ঙ্কর।

রুশ দুমার স্পিকার আরো বলেন: পশ্চিমা সমরাস্ত্র ব্যবহার করে রাশিয়ার অভ্যন্তরে হামলার পরিণতি কী হতে পারে তা আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের পার্লামেন্টগুলোকে মনে রাখতে হবে।

এ সম্পর্কে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন: আমরা এখন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে অবস্থান করছি। আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের অন্যতম এই প্রার্থী আরো বলেছেন: “বিশ্ব এখন আরো বেশি সংঘাত ও গোলযোগের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।”

ট্রাম্প দাবি করেন যে, একমাত্র তিনিই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ ঠেকাতে পারবেন।

অন্যদিকে ফরাসি পত্রিকা লামন্ড ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে ফ্রান্স সরকারের উদ্বেগের কথা জানিয়েছে।

পত্রিকাটি কূটনৈতিক সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে যে, ফ্রান্স সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা মনে করছেন ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে এবং এ কারণে তারা অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করছেন।

লামন্ডের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, গত কয়েকদিন ধরে ইউরোপ জুড়ে এই আশঙ্কা তীব্র আকার ধারণ করেছে যে, ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে অচিরেই রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি ন্যাটোর সংঘাত বেধে যেতে পারে।

বিভিন্ন রিপোর্টে বলা হয়েছে, আমেরিকা ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা কিয়েভকে তাদের সরবরাহ করা অস্ত্র দিয়ে রাশিয়ার গভীর অভ্যন্তরে হামলা চালানোর অনুমতি দেয়ার কথা বিবেচনা করছে।

ফ্রান্সের একটি কূটনৈতিক সূত্র লামন্ডকে বলেছে: “তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূত্রপাত ঠেকানোর জন্য সম্ভাব্য যা কিছু করতে হয় তার সবকিছু করতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি।”

ওই ফরাসি কর্মকর্তা রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের এ সংক্রান্ত হুঁশিয়ারির প্রতি ইঙ্গিত করে বলেছেন যে, রাশিয়া তার সামরিক অভিযানের বিস্তৃতি ব্যাপকভাবে বাড়িয়ে দিতে পারে এবং এ বিষয়টিকে গভীরভাবে বিবেচনা করা প্রয়োজন।

সমরাস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে ইলেকট্রনিক ডিভাইস; পশ্চিমা দেশগুলোর ইলেকট্রনিক ডিভাইস কেন কিনবেন না?

লেবাননের হিজবুল্লাহ যোদ্ধাদের পেজার ব্যবহার করে তাদের ওপর ইসরাইল যে হামলা চালিয়েছে তার বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী সমালোচনার ঝড় উঠেছে।

ইরানের বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক মোহাম্মাদ মারান্দি নিজের এক্স পেজে লিখেছেন: পশ্চিমা কোম্পানিগুলোর যেকোনো পণ্য আপনার, আপনার পরিবার ও আশপাশের মানুষগুলোর বিরুদ্ধে সমরাস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।

মঙ্গলবার দুপুরে লেবাননজুড়ে হাজার হাজার মানুষের কাছে থাকা পেজারগুলো একসঙ্গে বিস্ফোরিত হয়।

দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ওই সন্ত্রাসী হামলায় অন্তত ১১ জন নিহত ও ২,৭৫০ জন আহত হয়েছেন।

পার্সটুডে ফার্সি জানিয়েছে, ইরানের বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক মোহাম্মাদ মারান্দি নিজের এক্স পেজে লিখেছেন: “পশ্চিমা দেশগুলোর পাশাপাশি তাইওয়ান, কোরিয়া ও জাপানি কোম্পানিগুলোর ইলেকট্রনিক পণ্য কিংবা ব্যাটারির ওপর বিন্দুমাত্র আস্থা রাখা যায় না। এসব কোম্পানির যেকোনো পণ্য আপনার, আপনার পরিবার ও আশপাশের মানুষগুলোর বিরুদ্ধে সমরাস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। এসব দেশের পণ্য কেনা থেকে বিরত থাকুন।”

মতামত দিন