ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে সেনাবাহিনী যা করতে পারবে

ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতানির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা পেলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা।

‘দ্য কোড অব ক্রিমিন্যাল প্রসিডিউর, ১৮৯৮’ এর ১২(১) ধারা অনুযায়ী দুই মাসের (৬০ দিন) জন্য এই ক্ষমতা দিয়ে মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

সেনাবাহিনীর কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা সারাদেশে প্রয়োগ করতে পারবেন বলে প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে।

ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া হলে সেনাবাহিনী যা করতে পারবে

ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়ার কারণে এখন থেকে সেনাসদস্যরা তল্লাসি চালানো, জব্দ করা, গ্রেফতার করার মতো সিদ্ধান্ত বা আদেশ দিতে পারবে।

আগে এ ধরনের ব্যবস্থা নিতে বেসরকারি প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমোদন দরকার হতো।

কিন্তু এখন কমিশন্ড সেনা অফিসাররা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন বা আদেশ দিতে পারবেন।

বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক নুরুল হুদা গনমাধ্যমকে বলেন, এ ধরনের নজীর অতীতেও রয়েছে। এটি আনইউজুয়াল কোন ঘটনা নয়।

এর ফলে সেনাবাহিনীর কমিশন্ড অফিসাররা বেআইনি জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে হলে যে সমস্ত ক্ষমতা সিআরপিসিতে দেয়া আছে সেসমস্ত তারা ব্যবহার করতে পারবে বলে জানান পুলিশের এই সাবেক মহাপরিদর্শক। ।

প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা ধারাগুলোর কথা জানালে হুদা বলেন, “ওই ধারা মোতাবেকই দেয়া যায় তাদেরকে। কমিশন্ড অফিসাররা যখন চার্জ (ক্ষমতা গ্রহণ করা) নিবে তখন তারা ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার এক্সেস (নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ) করতে পারে।

জনস্বার্থে প্রয়োজনীয় মনে করছে বলেই সরকার করছে। এর নজীর আছে বলে জানান তিনি।

নুরুল হুদা বলেন, সার্চ, সিজার (জব্দ করা) এসব ক্ষমতা। কিছু কিছু অপরাধ সংক্রান্ত যাদেরকে সার্চ করা লাগে, এরেস্ট করা লাগে সেই ক্ষমতাগুলো দেয়া হচ্ছে।

এদিকে, প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, সেনাবাহিনীর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা ‘ফৌজদারি কার্যবিধির, ১৮৯৮’ এর ৬৪, ৬৫, ৮৩, ৮৪, ৮৬, ৯৫(২), ১০০, ১০৫, ১০৭, ১০৯, ১১০, ১২৬, ১২৭, ১২৮, ১৩০, ১৩৩ ও ১৪২ ধারার অপরাধগুলো বিবেচনায় নিতে পারবেন।

আইনের এসব ধারা অনুযায়ী একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের যেসব ক্ষমতা রয়েছে-

ধারা ৬৪ : ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে অপরাধ সংঘটনকারী ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করার বা গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেওয়ার এবং হেফাজতে রাখার ক্ষমতা।

ধারা ৬৫ : গ্রেপ্তার করার ক্ষমতা বা তার উপস্থিতিতে গ্রেপ্তারের নির্দেশনা যার জন্য তিনি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে পারেন।

ধারা ৮৩/৮৪/৮৬ : ওয়ারেন্ট অনুমোদন করার ক্ষমতা বা ওয়ারেন্টের অধীনে গ্রেপ্তারকৃত অভিযুক্ত ব্যক্তিকে অপসারণের আদেশ দেওয়ার ক্ষমতা।

ধারা ৯৫(২) : নথিপত্র ইত্যাদির জন্য ডাক ও টেলিগ্রাফ কর্তৃপক্ষের দ্বারা অনুসন্ধান এবং আটক করার ক্ষমতা।

ধারা ১০০ : ভুলভাবে বন্দি ব্যক্তিদের হাজির করার জন্য অনুসন্ধান-ওয়ারেন্ট জারি করার ক্ষমতা।

ধারা ১০৫ : সরাসরি তল্লাশি করার ক্ষমতা, তার (ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি) উপস্থিতিতে যে কোনো স্থানে অনুসন্ধানের জন্য তিনি সার্চ ওয়ারেন্ট জারি করতে পারেন।

ধারা ১০৭ : শান্তি বজায় রাখার জন্য নিরাপত্তার প্রয়োজনীয় ক্ষমতা।

ধারা ১০৯ : ভবঘুরে এবং সন্দেহভাজন ব্যক্তির ভালো আচরণের জন্য নিরাপত্তার প্রয়োজনীর ক্ষমতা।

ধারা ১১০ : ভালো আচরণের জন্য নিরাপত্তা প্রয়োজনীয় ক্ষমতা।

ধারা ১২৬ : জামিনের নিষ্পত্তি করার ক্ষমতা।

ধারা ১২৭ : বেআইনি সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করার আদেশ দানের ক্ষমতা।

ধারা ১২৮ : বেআইনি সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করার জন্য বেসামরিক শক্তি ব্যবহার করার ক্ষমতা।

ধারা ১৩০ : বেআইনি সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করার জন্য সামরিক শক্তি ব্যবহার করার ক্ষমতা।

ধারা ১৩৩ : স্থানীয় উপদ্রব নিয়ন্ত্রণে ক্ষেত্র বিশেষে ব্যবস্থা হিসেবে আদেশ জারি করার ক্ষমতা।

ধারা ১৪২ : জনসাধারণের উপদ্রবের ক্ষেত্রে অবিলম্বে ব্যবস্থা হিসেবে আদেশ জারি করার ক্ষমতা।

উল্লিখিত ক্ষমতা ছাড়াও, যে কোনো নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে মোবাইল কোর্ট আইন, ২০০৯ এর অধীনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করার জন্য সরকার এবং সেই সঙ্গে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দ্বারা সংশ্লিষ্ট এখতিয়ারের মধ্যে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

এই আইনের অধীনে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তার উপস্থিতিতে সংঘটিত অপরাধ বা ঘটনাস্থলে তার বা তার সামনে উন্মোচিত হওয়া অপরাধগুলো বিবেচনায় নিতে পারেন।

অভিযুক্তের স্বীকারোক্তির পর ম্যাজিস্ট্রেট সংশ্লিষ্ট আইন অনুযায়ী অপরাধীকে সাজা দিতে পারেন। তবে কারাদণ্ডের ক্ষেত্রে তা দুই বছরের বেশি হবে না।

মতামত দিন